নামজের ওয়াক্ত ও রাকাত সমূহঃ আজকে আমি আপনাদের মাঝে যে আর্টিকেল টি শেয়ার করবো তা হলো নামাজের ওয়াক্ত ও রাকাত সমূহ। যা আপনাদের জীবনে অতিব জরুরী আজকে আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনার জানতে পারবেন কোন নামাজ কত ওয়াক্ত, নামাজ কত রাকাত এবং কোন নামাজ কখন পড়তে হয়।
নামাজের ওয়াক্ত ও রাকাত সমূহ
ইতিহাস
ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী মুহাম্মদ (সাঃ) ৬১০ খ্রিস্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত লাভ করেন এবং অব্যবহিত পরে সূরা মুমিনের ৫৫ নম্বর আয়াত স্রষ্টার পক্ষ থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় দৈনিক দুই ওয়াক্ত নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ (আবশ্যিক) হওয়ার নির্দেশনা লাভ করেন। তিনি ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে সকাল সন্ধ্যা ও দুপুরের দৈনিক তিন ওয়াক্ত নামাজের আদেশ লাভ করেন। ৬১৯ খ্রিস্টাব্দের সাতাশে রজব তারিখে মিরাজের সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন আল্লাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। (আবু দাউদ, আহমদ, মালেক, নাসায়ি মেশকাত)
উল্লেখ্য যে, এই সময় জোহর, আসর ও এশা দুই রাকায়াত পড়ার বিধান ছিল। ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে আল্লাহর তরফ থেকে দুই রাকায়াত বিশিষ্ট জোহর, আছর ও এশাকে চার রাকাতে উন্নীত করার আদেশ দেওয়া হয়।
নামাজের ওয়াক্ত ও রাকাত সমূহ
আল্লাহতালা মুসলমানদের উপর দিন রাত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। কুরআন মাজিদের কতিপয় আয়াতে নামাজের পাঁচটি ওয়াক্তের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে; যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন 'আর নামাজ কায়েম কর দিনে দুই' প্রান্তভাগে (অর্থাৎ ফজর ও মাগরিবের সময়) ও রাতের প্রথম অংশে অর্থাৎ এশার সময় (সুরা হুদ আয়াতঃ ১১৪)
সূর্য ঢলে যাওয়ার পর হতে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত (অর্থাৎ যোহর, আছর, মাগরিব ও এশার) নামাজ কায়েম কর, আর কায়েম কর ফজরের নামাজ। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াতঃ ৭৮)
আর সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরে ও সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর রাত্রির কিছু সময়ে এশায় এবং দিনের পান প্রান্তগুলিতে ফজর যোহর ও মাগরিবে) যাতে তুমি সন্তুষ্টি হতে পার। সূরা ত্বোয়া-হা, আয়াতঃ ১৩০)
নামাজের ওয়াক্ত সমূহ
নামাজ যে ভাবে এল
পাঁচ ওয়াক্ত নাম মোট কত রাকাত
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নাম ও সময়
নামাজের শুরু ও শেষ সময় সূচী
নিচে সহি হাদিস অনুসারে নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ফজরঃ পাখি ডাকা ভোরের কিছুটা আঁধার থাকতেই অর্থাৎ সকালের আভা ছড়িয়ে পড়ার আগেই এই নামাজ আদায় করে নেওয়া ভালো। তবে ক্ষেত্র বিশেষে প্রয়োজনে সূর্যের উদীয়মান প্রথম অংশ পূর্ব দিগন্তরেখা অতিক্রম করার আগে মুহূর্ত পর্যন্ত নামাজ আদায় করে নেওয়া যেতে পারে। সূর্যোদয়ের সময় নামাজ পড়া নিষেধ।
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) 'গালাসে' (অর্থাৎ একটু অন্ধকার থাকতে) ফজরের নামাজ পড়তেন। (বুখারী ও মুসলিম)
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফজরের নামাজ এমন (অন্ধকার) সময় পড়তেন যে, নামাজি মেয়েরা চাদর জড়িয়ে ফেরার সময় অন্ধকারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না (বুখারী, মেশকাত)
আকাশবিদ পন্ডিতদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে সূর্য ডোবা থেকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত সময়টাকে আট ভাগে ভাগ করলে সাত ভাগের শেষ ও ৮ ভাগের শুরুটা ফজরের আওয়াল ওয়াক্ত। এর রূপ চান্দ্র মাসের ১৩ তারিখে চাঁদ ডোবার ও ২৬ তারিখে চাঁদ ওঠার সময়টাও ফজরের আওয়াল ওয়াক্ত বলে প্রমাণিত হয়। অভিজ্ঞতায় এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে সাধারণত সূর্য ওঠার দেড় ঘন্টা আগে এবং মৌসুম অনুযায়ী কখনো তার ও ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগে পরে সুবহে সাদিক উদিত হয় , যাকে ফজরের আওয়াল ওয়াক্ত বলে। ইমাম তাহাভি (রাহঃ) বলেন, রসূলূল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত হাদিস মোতাবেক গালাসে ফজরের নামাজ শুরু করা উচিত এবং এসফারে (একটু ফর্সা হলে) শেষ করা উচিত। এটাই হল ইমাম আবু হানীফ, ইমাম আবু ইউসুফ ও মোহাম্মদ রহেমাহুমুল্লাহ প্রমুখের মত এমটাই। (শারহে মাআ-নীল আসা-র ১ম খন্ড, ৯০ পৃষ্ঠা)
রাকাত সংখ্যাঃ ফজরের নামাজ মোট চার রাকাত। প্রথমে দুই রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা (আবশ্যক) এবং অতঃপর দুই রাকাত ফরজ।
যোহরঃ মধ্যাহ্নের সূর্য তার সর্বোচ্চ স্থান থেকে কিছুটা হেলে পড়ার পরপরই নামাজ আদায় করে নেওয়া ভালো। তবে সূর্য কিরণ যখন বেশ উত্তপ্ত থাকে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে একটু দেরিতে অর্থাৎ সূর্যের তেজ কিছুটা কমে এলে নামাজ আদায় করে নেওয়া অবকাশ রয়েছে। ক্ষেএবিশেষে আসরের সময় হওয়া পর্যন্ত নামাজ আদায় করে নেওয়া যেতে পারে । (মুসলিম)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গরমকালে ঠান্ডা হয়ে দেরি করে জোহর পড়তেন এবং শীতকালে জলদি পড়তেন। (নাসায়ি, মিসকাত)
আছরঃ কোন জিনিসের ছায়া সমপরিমাণ হয়ে যাওয়ার পর দ্বিগুণ হতে শুরু করা থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত আসরের সময় । (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, সূর্য যখন হলদে রং হয় এবং শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে এসে যায় তখন মুনাফিকরা আছরের নামাজ পড়ে। (মুসলিম, মেশকাত)
সুতরাং সূর্যের আবহাওয়া একটু হলদে রং হয়ে আসবার পূর্বেই আছর পড়া উচিত। ইমাম আবু হানিফা থেকেও বর্ণিত আছে যে, আছরের ওয়াক্তের শুরু হল এক ছায়া হতে। ইমাম আবু ইউসুফ ইমাম মোহাম্মদ এবং ইমাম যোফার ও অন্য তিনজন ইমামের মতও তাই। মোহাদ্দেস ইমাম তাহাভী বলেন আমরা এটাকে গ্রহণ করি। (তারাবি ৭৮ পৃষ্ঠা)
গোরারুল আযকারে এটাই গৃহীত হয়েছে। জিবরাইলের বর্ণনা থেকে এটাই সুস্পষ্ট যে, এ ব্যাপারে এটাই হলো সঠিক নাস্ ও হাদিস। (দূরররে মোখতার প্রথম খন্ড ৫৯ পৃষ্ঠা)
রসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি আছরের নামাজ ছেড়ে দেয় তার আমল নষ্ট হয়ে যায়। (বুখারী, মেশকাত)
রাকাত সংখ্যাঃ আছরের নামাজ মোট আট রাকাত। প্রথম চার রাকাত সুন্নাতে জা’য়েদা (অনাবশ্যক) এবং অতঃপর চার রাকাত ফরজ।
মাগরিবঃ সূর্য সম্পূর্ণরূপে অস্ত যাওয়ার পর কিছু সময়ের মধ্যেই নামাজ আদায় করে নেওয়া ভালো। তবে সূর্যাস্তের পর হতে যতক্ষণ পর্যন্ত নিক্ষিপ্ত কোন তীরের প্রতীক হবার স্থান দৃষ্টিগোচর হয় অর্থাৎ গোধূলির দেশ বিরাজমান থাকা (পশ্চিম দিগন্তের লাল আভা অদৃশ্য হয়ে রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে না আসা) পর্যন্ত নামাজ আদায় করে নেওয়া যেতে পারে। ( মুসলিম, মেশকাত)
রাতে ইবনে খুদাইস বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে নামাজ পড়তাম। তারপর আমাদের কেউ গিয়ে তীর ছুঁড়লে আমরা তার থেকে তীর পড়ার জায়গাটা দেখতে পেতাম। (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত)
রাকাত সংখ্যাঃ মাগরিবের নামাজ মোট ৭ রাকাত। প্রথম তিন রাকাত ফরজ, তারপর দুই রাকাত সুন্নত (আবশ্যক) এবং অতঃপর দুই রাকাত নফল।
এশাঃ গোধূলি পেরিয়ে রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসার পর হতে এই নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং রাতের এক তৃতীয় অংশ সময় থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যেকোনো সময়ে নামাজ আদায় করে নেওয়া যেতে পারে। (মুসলিম, মেশকাত)
তবে জরুরী কারণবশত ফজরের পূর্বে পর্যন্ত এশার সালাত আদায় করা জায়েজ আছে। (সহীহ মুসলিম আবু কাতাদাহ থেকে ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৭৯)
নু'মান বিন বাশির (রাঃ) এর বর্ণনা অনুযায়ী চাঁদের মাসের তৃতীয় রাতে চাঁদ ডুবে গেলে এশার সময় হয়। ( আবূ দাউদ, ৪১৯)
সূর্য ডোবার পর থেকে ঘড়ি ধরে দেড় ঘন্টা অতিবাহিত হলে এই ওয়াক্ত আসে।
রাকাত সংখ্যাঃ এশার নামাজ মোট ১৭ রাকাত। প্রথমে চার রাকাত সুন্নতে জায়েদা (অনাবশ্যক), চার রাকাত ফরজ, তারপর দুই রাকাত সুন্নত (আবশ্যক), তারপর দুই রাকাত নফল এবং সর্বশেষে তিন রাকাত বেতরের ওয়াজিব নামাজ (আবশ্যক) ও পরের দুই রাকাত নফল বেতরের নামাজ এশার দুই রাকাত সুন্নত বা নফল নামাজের পরেই আদায় করে নেওয়া যায়।
ফজর, জোহর, আছর ও মাগরিবের নামাজ বেশি দেরি না করে ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই আদায় করে নেওয়া উত্তম। কোন কারনে সময় সম্পর্কে বেখেয়াল হয়ে গেলে বা ঘুমিয়ে থাকলে বা কোন বিশেষ কারণে কোন নির্দিষ্ট নামাজের ওয়াক্ত সময় পেরিয়ে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা আদায় করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই নামাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে অর্থাৎ যে ওয়াক্তে নামাজ ছুটে গিয়েছে তা আগে আদায় করে নিতে হবে। যেমন সূর্যাস্তের আগে আসরের নামাজ আদায় করা সম্ভব না হলে সূর্যাস্তের পর আগে আসরের নামাজ এবং তারপর মাগরিবের নামাজ আদায় করতে হবে। তবে এজন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। সফরে থাকলে মাগরিব একটু দেরিতে পড়ে তার পরপরই এশার নামাজ আদায় করে নেওয়া অবকাশ রয়েছে। আবার সূর্য ঢলে পড়ার আগে সফরে বের হলে জোহর একটু দেরিতে পড়ে একসাথে আসরের নামাজ আদায় করে নেওয়া যায়।
জুম্মা'আঃ অধিকাংশ আলেম এর মতে জুম্মা, আ ও জোহরের সময় একই। যখন যোহরের শুরু হয় জুম্মা'আও তখনই শুরু হয়। অর্থাৎ ঠিক দুপুরের সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে কিছুটা ঢোলে পড়লে জুম্মা'আর সময় শুরু হয়। (বুখারী, হাঃ ৪১৬৮)
রাকাত সংখ্যাঃ জুম্মা'আর নামাজে দুই রাকাত ফরজ, যা যা ইমামের সাথে আদায় করে নিতে হয়। অধিকাংশআলেদের মতে, জুম্মা'আর ফরজের পূর্বে চার রাকাত কাবলার জুম্মা'আর এবং ফজরের পরে চার রাকাত বাদাল জুম্মা'আরসুন্নাত নামাজ আদায় করতে হয়। এছাড়া মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত দুখলুল মসজিদ ও দুই রাকাত তাহিয়াতুল ওযুর মোস্তাহাব নামাজ একং চার রাকাত বাদাল জুম্মা'আর সুন্নাত নামাজের পরে দুই রাকাত সুন্নাতুল ওয়াক্তিয়া নামাজও উৎসাহিত করা হয়। অর্থাৎজুম্মা'আরনামাজের বিবরণীতে বলা যায়ঃ
ক। মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত তাহিয়াতুল ওযু ও দুই রাকাত দুখলুল মসজিদের মোস্তাহাবনামাজ আদায় করবে (ঐচ্ছিক)
খ। চার রাকাত কাবলার জুম্মা'আর সুন্নাত নামাজ একাকী আদায় করবে।
গ। ইমামের খুৎবা পাঠ মনোযোগদিয়ে শুনবে।
ঘ। ইমামের সাথে দুই রাকাত জুম্মা'আর ফরজ নামাজ আদায়রকরবে।
ঙ। ফরজ নামাজোর পর তাৎক্ষণিকবাবে মসজিদ ত্যাগ করবেন না, বরং চার রাকাত বাদলা জুম্মা'আরসুন্নাতনামাজ এবং পরে দুই রাকাত সুন্নাতুল ওয়াক্তির নামাজ একাকী আদায় করবে।